Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

অতি ঘন পদ্ধতির আম বাগানে ফলন বৃদ্ধির প্রযুক্তি

ড. মো. শরফ উদ্দিন

সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ। নদী মাতৃক এই দেশ আয়তনে ক্ষুদ্র হলেও জনসংখ্যায় ভরপুর। এ ছাড়াও প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মুখ। বাড়তি জনসংখ্যার এই দেশে মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার পূরণে হিমশিম খাচ্ছেন দেশের নীতিনির্ধারকরা। এর সাথে যোগ হয়েছে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী ১০-১২ লাখ কর্মহীন রোহিঙ্গা। ফলে এসব জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে, বাড়তি খাদ্যশস্য ও ফলমূল। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, কলকারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত নির্মাণে প্রতি বছর চাষাবাদযোগ্য জমি ১% হারে কমছে এমনটিই শোনা যায়। আম্পান, আইলারমতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ পিছু ছাড়েনি এ দেশের। তারপরও কৃষিবান্ধব সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ, দিকনির্দেশনা, কৃষি ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার এবং কৃষি বিজ্ঞানীদের লাগসই উদ্ভাবন কৃষি উৎপাদনকে সুসংহত করেছে। আজ আমরা দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পর্ণ। তবে ফল ও সবজি উৎপাদনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সবাই ব্যস্ত। ফলের বাণিজ্যিক উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক গুণ বেড়েছে। দেশীয় ফলের সাথে সাথে বিদেশী ফলসমূহ দেশের চাহিদা পূরণে ভ‚মিকা রাখছে। এদেশের মানুষের সবচেয়ে পছন্দনীয় ফল হলো আম। সারা বছর চাহিদানুযায়ী ফল খেতে না পেলেও আমের মৌসুমে সাধ্যমতো পুষিয়ে নেন ভোক্তারা। ফলে বিগত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে আমের উৎপাদন বাড়ছে। এই চাহিদা পূরণে ২৩টি জেলায় আমের বাণিজ্যিক চাষাবাদ সম্প্রসারণ হয়েছে। তবে অন্য জেলাগুলোতেও আমের উৎপাদন বাড়ছে। তারপরও নতুন বাগান স্থাপনে থেমে নেই জমির মালিক ও আম চাষিরা। বিগত কয়েক বছরে সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় আম চাষ সম্প্রসারিত হলেও নওগাঁ জেলায় সবচেয়ে বেশি আম বাগানের সম্প্রসারণ হয়েছে। ধানের চেয়ে তুলনামূলক লাভজনক হওয়ায় প্রথমে ধানের জমিতে আমগাছ লাগানো শুরু করেছেন। এরপর তা শুধু আম বাগানে রূপান্তরিত হচ্ছে। ছবিতে ধানের জমিতে আমগাছ লাগানো হয়েছে। এই জেলার সবচেয়ে বেশি আম বাগান সম্প্রসারিত হয়েছে পোরশা ও সাপাহার উপজেলায়। এই জেলায় সবচেয়ে বেশি চাষ হয় বারি আম-৩ তথা আ¤্রপালি জাতের এবং এর পরের স্থান বারি আম-৪। অন্য জাতগুলোও কম পরিমাণে চাষ করতে দেখা যায়। সকল মানুষের মধ্যে একটি ভুল ধারণা রয়েছে, বারি আম-৩ জাত বা আ¤্রপালি সম্পর্কে। অনেকের ধারণা গাছটি আকারে বড় হয় না এবং বেশি বছর বাঁচে না। এই ধারণাটি পুরোপুরি ঠিক নয়। আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত¡ গবেষণা কেন্দ্র, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৫ বছর বয়সের গাছ রয়েছে এবং এই গাছগুলোর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ফলধারণক্ষমতায় বাড়ছে। এই জাতের গাছ বেশি বড় হয় না বিধায় চাষিরা অতি ঘন পদ্ধতিতে আম বাগান স্থাপন শুরু করেছেন।


অতি ঘন পদ্ধতি
সকলের জানার সুবিধার জন্য আম বাগান স্থাপনের অতি ঘন পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে ধারণা দেয়া হলো। এদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে যে আম বাগানগুলো দেখা যায়, সেগুলো কমপক্ষে ৩০ দ্ধ ৩০ ফুট দূরত্বে অর্থাৎ প্রতি হেক্টরে ১০০টি কলম লাগানো হতো তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ৪০ দ্ধ ৪০ ফুট  দূরত্বের বাগানও দেখতে পাওয়া যায়। অনেক বড় আম বাগানে এক বিঘা জমিতে  একটি বা দুইটি আমগাছ দেখা যায়। ১৯৮৫ সালে আম গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর বড় জাতগুলোর জন্য ৩০ দ্ধ ৩০ ফুট (প্রতি হেক্টরে ১০০টি গাছ) এবং ছোটজাতগুলোর জন্য ১২ থেকে ১৮ ফুট (৬২৫টি হতে ৫৫৫টি গাছ প্রতি হেক্টরে) দূরত্বে রোপণের জন্য পরামর্শ দেয়া হতো। ফলে ১০-১২ বছর অনায়াসে আম বাগানে অন্য ফসল চাষ ও আমের ফলন পেতে তেমনটি অসুবিধা হতো না। এরপর চালু হলো দুইটি বড় জাতের গাছের মধ্যে একটি ছোট জাতের গাছ লাগানো এবং ১০-১২ বছর পরে বড় গাছের সাথে প্রতিযোগিতা শুরু হলে মাঝের গাছটি কেটে ফেলার পরামর্শ দেয়া হতো। তবে অনেকে মাঝের ছোট গাছটি কাটতে চাইতেন না। ফলে উভয় গাছের ফলন বাধাগ্রস্ত হতো এবং রোগ ও পোকার আক্রমণের কারণে ভালো আম উৎপাদন করা সম্ভব হতো না। আর অতি ঘন পদ্ধতিতে লাইন হতে লাইন ৩ মিটার এবং গাছে থেকে গাছ ২ মিটার দেয়া হয়। ফলে এক হেক্টর জমিতে ১৬৬৭টি গাছ লাগানো হয়ে থাকে। এই বিশাল চাহিদাপূরণে অত্র এলাকায় গড়ে উঠেছে শত শত নার্সারি যেখানে গুণগত মানসম্পন্ন কলম উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। তবে কেউ কেউ ৩ মি.দ্ধ ৩ মি. অথবা ৪ মি. দ্ধ ৩মি. দূরত্বে আম বাগান করছেন। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা গেছে নার্সারি মালিকগণ জমির মালিককে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, যত গাছ তত আম। অপরপক্ষে আম গবেষকগণ এবং আম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এখন অতি ঘন পদ্ধতিতে আম বাগান স্থাপনে পরামর্শ প্রদান করেন না কারণ আমাদের দেশে সবাই জানেন একবার আমগাছ লাগালে ৩০-৪০ বছর অনায়াসে আম উৎপাদন ও বিক্রয় করা যাবে।


এমনও অনেক চাষি আছে, যারা শুধুমাত্র আমের মৌসুমে বাগানে গমন করেন এবং বছরের অন্যান্য সময় আম বাগানে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। তবে বেশির ভাগ চাষি আম বাগানে শুধুমাত্র সার প্রয়োগ ও বালাইনাশক ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু অতি ঘন পদ্ধতির আম বাগানে ১২ মাস বাগান পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। যেমন সময়মতো সার প্রয়োগ, সেচপ্রয়োগ, প্রæনিং, ট্রেনিং, মরা ডালপালা অপসারণ ইত্যাদি। যদি কোন চাষি গাছ লাগানোর পর তিন বছর প্রুনিং না করে থাকেন তাহলে পরের বছরে আমের ফলন বাড়ার পরিবর্তে কমার সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে সঠিক জাত নির্বাচন করে অতি ঘন এবং ঘন পদ্ধতিতে আম বাগান স্থাপন করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।


পোরশা, সাপাহার, নাচোল, গোমস্তাপুর উপজেলার অনেক আম বাগান সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, নতুন বাগানগুলো আমগাছ রোপণের সাধারণ দূরত্ব অনুসরণ না করে ঘন ও অতি ঘন পদ্ধতি অনুসরণ করছেন। সেক্ষেত্রে প্রতি হেক্টর জমিতে ১২০০ থেকে  ১৭০০ পর্যন্ত আমের কলম রোপণ করছেন। ফলে গাছ রোপণের ৩-৪ বছরের মধ্যেই একটি গাছ অন্য গাছের মধ্যে প্রবেশ করেছে। কোন কোন চাষি আম সংগ্রহ করার পর প্রুনিং, ট্রেনিং করে গাছগুলোকে ছোট রাখার চেষ্টা করেছেন। তবে অধিকাংশ চাষির এই ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এসব আম বাগানে ২-৩ বছরের মধ্যে ভালো ফলন পাওয়ার পরিবর্তে ফলন কমার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। অতি ঘন পদ্ধতিতে আম বাগান করলে আম বাগান ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। আম গবেষক ও আম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ মনে করেন, এ সব চাষিদের এই মুহুর্তে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, অল্প সময়ে ফলের চাহিদা মেটাতে ও আমের ফলন বাড়াতে এই ধরনের উদ্যোগ যুক্তিসংগত কিন্তু সঠিক নিয়মকানুন না জেনে অতিঘন পদ্ধতিতে আম বাগান করলে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি থাকে।


অতি ঘন পদ্ধতিতে স্থাপিত আম বাগান হতে ভালো ফলন পেতে করণীয়
প্রতি  বছর গাছের বয়সানুযায়ী সুষমমাত্রার সার প্রয়োগ করতে হবে। শুধুমাত্র রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করে সাথে পচা গোবর সার/ জৈবসার/ ভার্মিকম্পোস্ট/ ট্রাইকোকম্পোস্ট/ আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা উত্তম।
আম সংগ্রহ করার পরপরই প্রুনিং করতে হবে। তবে প্রয়োজন হলে ট্রেনিং করতে হবে।


নতুন পাতা বের হলে এ্যানথ্রাকনোজ রোগ এবং পাতাকাটা উইভিল পোকার আক্রমণ দেখা যায় সেক্ষেত্রে কার্বারিল গ্রুপের কীটনাশক ও মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতিলিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে একত্রে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। অন্যথায় নতুন ডগাপাতা শূন্য হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। খরা মৌসুমে এবং সার প্রয়োগের পর পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।


অতি ঘন পদ্ধতিতে আম বাগানে পর্যাপ্ত আলো প্রবেশ করতে পারে না। ফলে হপার পোকা ও মাছি পোকার উপদ্রব বেশি হতে পারে। সেজন্য হপার পোকা যেন না থাকে সেজন্য ইমিডাক্লোপ্রিড/কার্বারিলগ্রুপের যে কোন ভাল কীটনাশক নির্দেশিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে এবং মাছি পোকা দমনের জন্য সঠিক সময় ও পদ্ধতি অনুসরণ করে ফ্রুটব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।
এ ছাড়াও আম বাগানে অন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেজন্য আম গাছের পরিচর্যার মাস-পঞ্জি অনুসরণ করতে হবে।

 

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ফল বিভাগ, উদ্যানতত্ত¡ গবেষণা কেন্দ্র, বারি, গাজীপুর, মোবাইল: ০১৭১২১৫৭৯৮৯, ই-মেইল: sorofu@yahoo.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon